বাংলায় দলের ভবিষ্যৎ কী, তা হাতড়ে বেড়াচ্ছে সিপিএম। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনই হোক, কিংবা মহেশতলা উপনির্বাচন, পরের পর ভোটে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে দল, তাতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কার্যত হতাশ। আর সেই কারণে দলের তিনদিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কর্ণাটক বিধানসভা ভোট এবং অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যের উপনির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা হলেও পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং মহেশতলা উপনির্বাচনের প্রসঙ্গটি বেমালুম এড়িয়ে গিয়েছে সিপিএম। এমনকী আজ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে এই ইস্যুতে যে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানেও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রসঙ্গের উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি। যাকে রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সিপিএমের অন্দরের খবর, বাংলার উল্লিখিত দু’টি নির্বাচনে সিপিএমের ফল এতটাই খারাপ হয়েছে যে, সেটিকে আলোচনার টেবিলে এনে আর হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাননি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে দলের ২২তম পার্টি কংগ্রেসের পর ২২ জুন থেকে ২৪ জুন প্রথমবারের জন্য বৈঠকে বসেছিল সিপিএমের নয়া কেন্দ্রীয় কমিটি।
কর্ণাটক বিধানসভা ছাড়াও আর কোন কোন রাজ্যের উপনির্বাচনী ফলাফল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছে সিপিএম? দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দিল্লির এ কে গোপালন ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেরলের চেঙ্গান্নুর উপনির্বাচনী ফলাফলকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে সিপিএম। যেভাবে বিজেপির আগ্রাসী ভূমিকা সত্ত্বেও ওই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিএম তথা এলডিএফ তাদের ভোট শতাংশের হার গতবারের থেকে অনেকটাই বৃদ্ধি করেছে, তাতে কেরল নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি। নির্দিষ্ট করে আলোচনায় এসেছে কর্ণাটকের বাগেপল্লি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রসঙ্গও। যেখানে সিপিএম প্রার্থী জি ভি শ্রীরামা রেড্ডি এবার ৫১ হাজার ৬৯৭টি ভোট পেয়েছে দ্বিতীয় হয়েছেন। ২০১৩ সালে এই কেন্দ্রে সিপিএমের ভোট ছিল ৩৫ হাজার ৪৭২। দলীয় সূত্রের খবর, সবক’টি ক্ষেত্রে বিজেপিকে কতটা পর্যুদস্ত করা সম্ভব হয়েছে, সেটি প্রতিষ্ঠিত করাই সিপিএমের আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু বাংলায় এই কাজ করতে বঙ্গ কমরেডরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আর এটিকে মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গের উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে একটি খসড়া রিপোর্ট পেশ করে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছিলেন, অবিলম্বে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে। এই ইস্যুতে দলের এরিয়া এবং জেলা কমিটিগুলিকে প্রয়োজনে পুনর্গঠিত করে শক্তিশালী করার উপরও জোর দিয়েছিলেন তিনি। এক্ষেত্রে কেরল এবং ত্রিপুরার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও বাংলায় দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতির হাল নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব হতাশ হলেও লড়াই-আন্দোলন জারি রাখতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গে। আজ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘গণতন্ত্রের হত্যা’, এই ইস্যুকে সামনে রেখে আগামী জুলাই মাসে ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলন-কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বাংলা এবং ত্রিপুরার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জাতীয়স্তরে ইস্যু করে দিল্লিতেও অবস্থান বিক্ষোভ করা হবে। দলীয় সূত্রের খবর, আগামী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল ঠিক কী হবে, তা নিয়ে পরের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেই নির্দিষ্ট করে আলোচনা করবে দল।