প্রতিদিনের ইঁদুর দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে যখন মন হাঁফিয়ে উঠেছিল তখন ভাবলাম -না,আর নয়৷ এবার একটু শুদ্ধ বাতাসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতেই হবে কোলকাতায় অনেক দুর্লভ জিনিস হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু শুদ্ধ বাতাসের বড়ই অভাব৷ শুরু হল খোঁজ৷ হাতে মাত্র দুদিন সময়৷ কোথায় যাই? কোথায় যাই? হঠাৎই পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন নিগমের সাইটে ব্যারাকপুর এ ‘মালঞ্চ’ লজের সন্ধান পেলাম৷ ইন্টারনেটে লজের ছবি দেখে খুব ভালো ও লাগল৷ ব্যাস্ আর কী৷ সঙ্গে সঙ্গে www.wbtcl.com সাইট থেকে গঙ্গা ফেসিং ঘর বুক করে ফেললাম৷ এসি রুমের প্রতিদিনের ভাড়া ২৩৫০/- টাকা৷ এ প্রসঙ্গে একটি ছোট্ট একটা তথ্য-মালঞ্চ লজটির নির্মাণ বছর ত্রিশ আগে হলেও সম্প্রতি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে লজটির সংস্কার হয় এবং নতুনরূপে তা সেজে ওঠে৷
পরদিন সকালে আমরা ব্যাগ গুছিয়ে নিজেদের গাড়ী নিয়ে রওনা দিলাম৷ শ্যামবাজার পাঁচমাথা থেকে বি.টি রোড ধরে সোজা ব্যারাকপুর চিড়িয়ামোড়৷ সেখান থেকে বাঁদিকের ছোট জনবহুল রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছালাম মালঞ্চ টুরিষ্ট লজের গেটের সামনে৷ ব্যারাকপুর স্টেশন থেকে টোটো করেও এখানে পোঁছানো যায়৷ গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে মনে হল শহরের কোলাহল থেকে হঠাৎ আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে এক তপোবনে এসে পৌঁছেছি৷ শুরুতেই চোখে পড়ল বড় বড় আম গাছ৷ তাতে অজস্র আম ঝুলছে৷ একটা স্হলপদ্মের গাছ ও চোখে পড়ল৷ বাচ্চাদের খেলার জন্য আছে পার্ক আর আছে উন্মুক্ত সবুজ মাঠ৷গাড়ি পার্কিং এর ও পর্যাপ্ত ব্যবস্হা আছে৷ তপ্ত মরুভূমির মাঝে এ যেন ছোট্ট একটা মরুদ্যান৷
রিসেপশন এর কাজ মিটিয়ে যখন রুম এর দিকে যাচ্ছি তখন মুগ্ধতা আরো বেড়ে গেল৷ আমাদের পাশে পাশে চলেছে স্বচ্ছতোয়া গঙ্গা৷ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম৷
সরকারী লজের ঘর কেমন হবে তা নিয়ে মনে একটু সংশয় ছিলই৷ ঘরে ঢুকেই তা দূর হল৷ ঘরের জানলা খুললেই সামনে গঙ্গা নদী, তার পাড় দিয়ে সারি সারি দেবদারু গাছ৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিশাল ঘরে পরিপাটি বিছানা দেখে মন পরিতৃপ্ত হল৷ এখানকার খাবার ও মন্দ নয়, ঘরোয়া স্বাদ পেলাম৷ আর লজের সদস্য দের ব্যবহার ও অমায়িক৷
দুপুরে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে গেলাম গান্ধীঘাটে৷ এখানে গঙ্গা আবর্জনা মুক্ত, বাঁধানো ঘাটটি ও বেশ পরিষ্কার৷ বিকেলে অনেক স্থানীয় মানুষ এখানে ঘুরতে অাসে৷অামরা ও ইতি উতি ঘুরে কিছু ফটো সেশন করে ফিরে এলাম মালঞ্চে৷
সন্ধ্যায় গঙ্গার পাড়ে বসে যখন চা খাচ্ছিলাম তখন অনিমেষ নয়নে দেখছিলাম গঙ্গার অবিরাম কুল কুল করে বয়ে চলা, আর উপভোগ করছিলাম তার উদ্দাম বাতাস৷মন বার বার কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিল৷ শহরের এত কাছে এত সুন্দর একটা জায়গা আছে তা আমরা জানতামই না৷ মুগ্ধ চোখে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে কবিগুরুর কবিতার সেই বিখ্যাত লাইনটি মনে পড়ে গেল…..
‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপর
একটি শিশিরবিন্দু৷’
(মতামত লেখিকার ব্যক্তিগত )