মানুন আর নাই মানুন, পর্তুগালের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো! বর্তমান দলটিতে যার রয়েছে গভীর প্রভাব। তাকে ঘিরেই বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছেন পর্তুগিজরা।
দেখাটাও স্বাভাবিক। সেই ২০০৩ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলছেন রোনাল্ডো। এখন পর্যন্ত দলটি যত সাফল্য পেয়েছে তার হাত ধরেই। তাই কখনই যে স্বাদ পাওয়া হয়নি সিআর সেভেন জাদুতে তা চেখে দেখার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
২০০৩ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে কাজাখস্তানের বিপক্ষে অভিষেক হয় রোনাল্ডোর। সেই হিসাবে দলকে ১৫ বছর সেবা দিচ্ছেন তিনি। এ সময়ে দেশটির হয়ে ১৪৯ ম্যাচে ৮১ গোল করেছেন এ সুপারস্টার।
এ মুহূর্তে পর্তুগালের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনাল্ডো। শুধু নিজের ঝুলিই সমৃদ্ধ করেননি তিনি। এর বদৌলতে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে সেরা সাফল্য ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতেছেন পর্তুগিজরা। পাশাপাশি মর্যাদার টুর্নামেন্টটিতে একবার করে রানার্সআপ ও সেমিফাইনাল খেলার গৌরব অর্জন করেছেন তারা। এ ছাড়া বৈশ্বিক মঞ্চ বিশ্বকাপের সেমিতে খেলারও সৌভাগ্য হয়।
দেশের হয়ে ক্যারিয়ারে সাতটি মেজর টুর্নামেন্টে গোল করার কীর্তি আছে রোনাল্ডোর। সবশেষ টানা তিন বিশ্বকাপেই প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ান তিনি। পাশাপাশি গেল চার ইউরো আসরে গোল করেন সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।
এবার পর্তুগালের রাশিয়া বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলারের অগ্রণী ভূমিকা। সর্বোচ্চ ১৫ গোল করে দলকে বিশ্ব মঞ্চের টিকিট পাইয়ে দিয়েছেন তিনি।
বয়স হয়ে গেছে ৩৩। এ বয়সে যেখানে অনেক খেলোয়াড় বুটজোড়া তুলে রাখার প্রস্তুতি নেন, সেখানে দোর্দণ্ড প্রতাপে খেলে যাচ্ছেন রোনাল্ডো। তাকে ঘিরে রেকর্ড টানা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্নের জাল বুনছে রিয়াল। লস ব্লাঙ্কোজরা যদি পারে, তা হলে পর্তুগিজরা নয় কেন?
এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে তাঁকে বিশ্বকাপ জেতা নিয়ে তিনি জানান, “আমরা প্রত্যেকে সেরা পারফরম্যান্স মেলে ধরার চেষ্টা করব। তবে এটা বিশ্বকাপ। স্পেন, ইরান ও মরক্কোর মতো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে গ্রুপে। তাই নক-আউট পর্বে পৌঁছানোই পর্তুগালের প্রথম লক্ষ্য। তারপর অনেক কিছুই ঘটতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি, আমরা ফেভারিটদের তালিকায় নেই। রাশিয়ায় সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে থাকবে গতবারের বিজয়ী জার্মানি, ব্রাজিল, স্পেন ও আর্জেন্তিনা। প্রত্যেকটি দেশেরই যথেষ্ট ওজন রয়েছে। তবে ফুটবলে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়। দিনের পারফরম্যান্সের উপরেই সবকিছু নির্ভর করে। আর আমরা সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি।”
স্পেনের সাথে ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রোনাল্ডো বলেন, “ওই ৯০ মিনিট আমার মতো সের্গিও র্যামোসও ভুলে যাবে রিয়াল মাদ্রিদের আমাদের সম্পর্কের কথা। ম্যাচের পরে আমরা অবশ্যই বন্ধু। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতে তা প্রভাব ফেলবে না। শুধু র্যামোস নয়, স্পেনের ইসকো, আসেন্সিও, কার্ভাহালরা আমার খেলা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। পাশাপাশি আমিও জানি কার কোথায় দুর্বলতা রয়েছে। তাই এই ম্যাচ দুই দলের পক্ষেই যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। ফুটবল মাঠে পর্তুগাল এবং স্পেনের দ্বৈরথ বহুদিন ধরেই। দু’টি দেশের সমর্থকরাই এই ম্যাচ দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে স্পেনের থেকে আমরা এগিয়ে। তবে তার মানে আমরাই জিতব, এটা ধরে নেওয়া উচিত নয়। মনে রাখবেন, একাধিক গ্রেট ফুটবলার রয়েছে বলেই স্পেন এবার অন্যতম ফেভারিট। তবে ওদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচ খেলতে হবে বলে আমরাও বাড়তি উদ্দীপ্ত। এবারও আমাদের হারিয়ে স্পেন শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হলে তা হবে কাকতালীয়। তবে সেটা এখনই বলার বা ভাবার সময় আসেনি।”
“দেখুন, প্রত্যেক ফুটবলারেরই লক্ষ্য থাকে বিশ্বকাপে খেলা। আর এটা আমার চতুর্থ বিশ্বকাপ হতে চলেছে। কেরিয়ার শুরু করার সময় এতদূর আসতে পারব বলে স্বপ্নও দেখিনি। সত্যি বলছি, কেরিয়ার এত ঝলমলে হবে তা কোনওদিন ভাবতে পারিনি। বিশ্বের সেরা দু’টি ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়ে এবং একাধিক ট্রফি জিততে পেরে আমি ভাগ্যবান। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড এবং রিয়াল মাদ্রিদ আমায় পরিণত করেছে। জাতীয় দলের হয়েও ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আর এটাই এখনও পর্যন্ত পর্তুগালের একমাত্র আন্তর্জাতিক সাফল্য। বিশ্বকাপ জেতাও আমার স্বপ্ন। পরতে চাই বিশ্বসেরার মুকুট। আর তা পেলে দারুণ খুশি হব।”
“জীবনের থেকে এই শিক্ষাই আমি পেয়েছি। ঈশ্বর চাইলেই আপনি কিছু পেতে পারেন। না হলে নয়। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘোর থাকলে নিজের উপর চাপ বাড়বে। যা পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবেই। তবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য তো রয়েইছে। প্র্যাকটিস এবং ম্যাচে সেরাটা দেওয়াই আমার কর্তব্য। এবারেও তার অন্যথা হবে না।”
পর্তুগাল যোগ্যতা–অর্জন পর্বে তুলনায় সহজ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হলেও, বিশ্বকাপে চূড়ান্ত পর্বে সেমিফাইনালে আসতে পারবে কিনা বলা যায় না। সেই অর্থে বলতে গেলে খেলা শুরু হওয়ার আগে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন সম্পর্কে ধারণা করা মোটেই সম্ভব নয়। তবু, পর্তুগাল থাকা মানে রোনাল্ডো থাকা, যত বেশি দিন থাকে ততই আগ্রহ থাকবে। দেখা যাক, রোনাল্ডো তার জাতীয় দলকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে।